ব্যাংকের চাকুরী খুবই জটিল; আবার খুবই রোমাঞ্চকর। একজন ব্যাংকারকে কখনো ইঞ্জিনিয়ার, কখনো শিক্ষক, কখনো গবেষক, কখনো অর্থনীতিবিদ, কখনো পরিসংখ্যানবিদ, কিংবা কখনো আবির্ভূত হতে হয় আইনবিদ হিসেবে। ব্যাংকের প্রতিটি সেকশনেনর কাজই গুরুত্বপূর্ণ। তাই একজন ব্যাংকারকে সব বিষয়েই কম বেশী দক্ষতার পরিচয় দিতে হয়। এখানে দক্ষতার কোন বিকল্প নেই। বিশেষ করে লোন বা ঋণ ও অগ্রিম সেকশনের একজন কর্মকর্তাকে খুবই দক্ষ হতে হয়। বিশেষ করে বন্ধকী সম্পত্তির বিপরীতে ঋণ প্রদানে যারা কাজ করেন, তাদেরকে জমি সংক্রান্ত বিষয়ে বিশেষজ্ঞ হতে হয়।
প্রিয় ব্যাংকারবৃন্দ, আজ আমরা আলোচনা করব জমির দলিল নিয়ে। আপনি অবশ্যই অবগত আছেন জমি বন্ধকীর ক্ষেত্র দলিল খুবই গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। জমির দলিল যদি ঠিক না থাকে, তবে সে জমি বন্ধকী নিয়ে ঋণ বিতরণ করা হলে ব্যাংকের কোন লাভ হয় না। বরং আরো ক্ষতির কারণ হয়ে উঠে। তাই আজ আমরা জানব জাল দলিল সম্পর্কে।
যেভাবে জাল দলিল সৃষ্টি হয়-
সাধারণত অসৎ উপায়ে জমির জাল দলিল তৈরি হয়ে থাকে। কিভাবে কিংবা কী উপায়ে জমির দলিল জাল করা হয় তার বর্ণনা নিম্নে উল্লেখ করা হলো।
১) ভূয়া মালিক সেজে দলিল সম্পাদন-
জমির মালিকানা ছাড়াই/ মালিকানা না থাকা সত্বেও দলিলদাতা সেজে বা কাউকে মালিক সাজিয়ে জমি সাব-রেজিস্ট্রি অফিস থেকে রেজিস্ট্রি করে নেয়া হয়। এখানে সম্পাদিত দলিলটি জাল দলিল।
২) সহশরিকদের বাদ দিয়ে দলিল সম্পাদন-
পিতা কিংবা মাতার মৃত্যুর পর তাদের রেখে যাওয়া সম্পত্তিতে তাদের ছেলে-মেয়েরা অংশিদার বা মালিক হয়। অনেকক্ষেত্রে দেখা যায় সহশরিকদের অজান্তে তাদেরকে বাদ দিয়ে বণ্টননামা দলিল করা হয় কিংবা রেজিস্ট্রি দলিল মূলে জমি বিক্রি করে দেয়া হয়। এখানে সম্পাদিত বণ্টননামা দলিল কিংবা রেজিস্ট্রি দলিলটি জাল দলিল।
৩) অর্পিত সম্পত্তি বা মৃত ব্যক্তির সম্পত্তি জীবিত দেখিয়ে দলিল সম্পাদন-
অর্পিত সম্পত্তি প্রমাণ সাপেক্ষ মালিকানা/ ওয়ারিশ প্রমাণ করে যথাযথ প্রক্রিয়ায় তা অর্পিত তালিকা থেকে প্রত্যাহার না করে মালিক সেজে বা কাউকে মালিক সাজিয়ে জমি সাব-রেজিস্ট্রি অফিস থেকে রেজিস্ট্রি করে নেয়া হয়। এখানে সম্পাদিত দলিলটি জাল দলিল।
৪) সরকারি সম্পত্তি ব্যক্তিমালিকানাধীন দেখিয়ে দলিল সম্পাদন
সরকারি সম্পত্তি ব্যক্তিমালিকানাধীন দেখিয়ে ক্রয় বিক্রয় বা রেজিস্ট্রি দলিল করা হলে তা জাল দলিল হিসেবে গণ্য হবে। সাধারণত প্রতিটি মৌজার ১ নং খতিয়ানে সরকারি জমির উল্লেখ থাকে/ বিবরণ দেওয়া থাকে।
৫) মৃত ব্যক্তির জমি রেজিস্ট্রি দলিল সম্পাদন
জমির মালিক মৃত্যুবরণ করলে ভূয়া লোক মালিক সেজে কিংবা কাউকে মালিক সাজিয়ে দলিলের মাধ্যমে জমি রেজিস্ট্রি করলে দলিলটি জাল হিসাবে গণ্য হবে।
৬) জীবিত মালিককে মৃত সাজিয়ে ওয়ারিশ সেজে দলিল করলে-
অনেক সময় জমির মালিক মৃত্যুবরণ না করা স্বত্বেও তাকে মৃত উল্লেখ করে তার ওয়ারিশ সেজে কিংবা কাউকে ওয়ারিশ সাজিয়ে দলিলের মাধ্যমে জমি রেজিস্ট্রি করলে দলিলটি জাল হিসাবে গণ্য হবে।
৭) ছদ্মবেশী লোকের দলিল সম্পাদন-
জমির মালিক বিদেশে থাকলে কিংবা এলাকার বাইরে অবস্থান করলে তার অনুপস্থিতে জাল লোক সেজে দলিলের মাধ্যমে জমি রেজিস্ট্রি করালে দলিলটি জাল হিসাবে গণ্য হবে।
৮) ঘষামাজা/ ওভাররাইটিং করলে
মূল দলিল ঘষামাজা বা ওভাররাইটিং করে দাতা বা গ্রহিতার নাম, দাগ নম্বর বা খতিয়ান নম্বর বা চৌহদ্দি পরিবর্তন করেও দলিল জাল করা হয়। ঊল্লেখ্য দলিলে ঘষামাজা বা ওভাররাইটিং গ্রহণযোগ্য হয় না।
৯) সাব-রেজিস্ট্রি অফিসের সীল বা/ ও স্বাক্ষর নকল করে দলিল সম্পাদন-
সাব-রেজিস্ট্রি অফিসের সীল এবং সাব-রেজিস্ট্রারের স্বাক্ষর জাল করেও জাল দলিল তৈরি হতে পারে।
ধন্যবাদ। আজ এ পর্যন্তই। পরবর্তীতে কোন একদিন আমরা জানব জাল দলিল চেনার উপায় সম্পর্কে।
লেখক- রিপন আবু হাসনাত, একজন ব্যাংকার।
1 মন্তব্যসমূহ
এই মন্তব্যটি একটি ব্লগ প্রশাসক দ্বারা মুছে ফেলা হয়েছে।
উত্তরমুছুন